![]() |
আমাদের মানবদেহের অতিপ্রয়োজনীয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম। মানবদেহের কোমরের কিছুটা ওপরেই দুই পাশে দুটি কিডনি অবস্থান। পরিণত বয়সে একটি কিডনি ১১-১৩ সেমি লম্বা, ৫-৬ সেমি চওড়া এবং ৩ সেমি পুরু হয়। একটি কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। তবে বাম কিডনিটি ডান কিডনি অপেক্ষা একটু বড় ও কিছুটা ওপরে থাকে। মানবদেহে অবস্থান করা প্রতিটি কিডনি প্রায় ১২ লাখ নেফ্রন দিয়ে তৈরি। আর নেফ্রন হলো কিডনির কার্যকর ও গাঠনিক একক। কোনো কারণে এই নেফ্রনগুলো নষ্ট হয়ে গেলে কিডনি দ্রুত অকেজো হয়ে যায়।
কিডনি রোগে সাধারণত একসঙ্গে দুটি কিডনি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে কিছুক্ষেত্রে একটি কিডনি আক্রান্তের হার কমবেশি হয়ে থাকে এরকমটা দেখা গেছে। আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত অসংখ্য জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হচ্ছে। আর এসব বিক্রিয়ায় উৎপন্ন দূষিত পদার্থ রক্তে মিশে যায়। আর কিডনি তার ছাঁকনির মাধ্যমে রক্তকে ছেঁকে পরিশোধিত করে এবং দূষিত পদার্থগুলো (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটনিন ইত্যাদি) দেহ থেকে মূত্রের সঙ্গে বের করে দেয়। এভাবে কিডনি আমাদের দেহকে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও কিডনি এর আরো অন্যান্য কাজও আছে।
মানবদেহে কিডনি রোগ এমনই মারাত্মক যে, যা কোনো প্রকার লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়াই খুব ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। আর এজন্যই এই রোগকে একটি নীরব ঘাতক বলে অভিহিত করা হয়। এই রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগী কখনো কখনো কোনো উপসর্গ বুঝে ওঠার আগেই তার কিডনির শতকরা ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিডনি রোগ যেহেতু অনেক প্রকার সেহেতু এর লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
মানবদেহে কিডনি রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে হঠাৎ করে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ ও সংখ্যার পরিবর্তন বিশেষ করে রাতে বেশি প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এবং প্রোটিন চলে যাওয়া, চোখের চারপাশে ও পায়ের গোড়ালিতে পানি জমাট বাধা, প্রস্রাবে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া করা ও অস্বাভাবিক গন্ধ হওয়া, রক্তশূন্যতার পরিমান বেড়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ও শরীর চুলকানো, বমি বমি ভাব হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে পাথর বের হওয়া, হাত, পা মুখসহ সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া, গ্লোমেরুলার ফিল্টারেশন রেট ৯০-এর কম হওয়া ইত্যাদি।
তিন মাস চিকিৎসার পরও যদি কিডনি রোগের উন্নতি না হয় তবে তা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং নেফ্রাইটিস (কিডনির বিভিন্ন সমস্যা): এই তিনটি রোগই ৮০% মানুষের কিডনি ফেইলিউর করে। এই রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। তবে কিছুটা সচেতন হলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিডনি ফেইলিওর প্রতিরোধ করা যায়।
বিশ্ব কিডনি দিবসে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল পর্যায় থেকে শিশুদের কিছু নিয়ম মেনে চললে কিডনি রোগ ছাড়াও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ওজন, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাদ্য পরিমিত এবং সুষম হওয়া উচিত। সারাদিনে পরিমিত পরিমাণ পানি পান করুন।
ধূমপান এবং মাদক এড়ানো এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যথা উপশমকারী বা অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই খাবেন না। এটা পরিষ্কার হতে হবে. প্রস্রাব এবং রক্তের ক্রিয়েটিনিন নিয়মিত বিরতিতে পরীক্ষা করা উচিত।
যেসব খাবারে কিডনি ভালো থাকে:
প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস (২ লিটার) বিশুদ্ধ পানি পান করা প্রয়োজন। তবে ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে এর অধিক পানি পান করা প্রয়োজন হতে পারে।
প্রচুর ফল ও সবজি:
দানা বা বীজ জাতীয় খাদ্য খান যেমন ব্রেড, নুডুলস, বাদাম ইত্যাদি। সপ্তাহে অন্তত একটি কচি ডাবের পানি পান করুন। প্রতিদিন অন্তত চারটি থানকুচি পাতা চিবিয়ে খেতে হবে। শশা, তরমুজ, লাউ, বাঙ্গি, কমলালেবু, লেবু, মাল্টা, ডালিম, বীট, গাজর, আখের রস, বার্লি, পিয়াজ, সাজনা ইত্যাদি পরিমাণ মতো খেতে হবে।