নতুন পোষ্টের বিজ্ঞপ্তি পেতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করুন!

লিভারের সমস্যা কেন হয় এবং সুস্থ রাখতে আমাদের কি করণীয়?

লিভারের সমস্যা

লিভারের সমস্যা কেনো হয় এবং লক্ষন কি?

কমবেশি আমরা সবাই লিভারের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে সচেতন। লিভারের সমস্যা হওয়ার পর মানুষ যতটুকু সতর্ক থাকে কিন্তু রোগটি হওয়ার আগে আমরা সামান্য পরিমাণও সতর্ক থাকি না শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গ নিয়ে। এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির আগে থেকে যত্ন নিলে লিভারের সমস্যা কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো।

রোগের বিভিন্ন প্রকারভেদ: লিভারের রোগকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- জেনেটিক, সংক্রামক এবং জীবনধারা সম্পর্কিত। তবে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বেশিরভাগ দেখা দেয় অনিয়মিত জীবনযাপনের জন্য। আবার হেপাটাইটিসের বিভিন্ন সমস্যার কারনেও লিভারের সংক্রমণে আক্রান্ত আরেকটি কারণ। আর আয়রন জমার ফলে লিভারে যে সমস্যা দেখা দেয় তা হচ্ছে জেনেটিক। অনেক ক্ষেত্রে লিভারে অতিরিক্ত আয়রন জমে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে। তখন একে হিমোক্রোমাটোসিস বলে।

ফ্যাটি লিভারের সমস্যা: একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অ্যালকোহলিক এবং নন-অ্যালকোহলিক। আপনি হয়ত শুরুতেই লক্ষ্য করেছেন যে, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারনে লিভারে চর্বি জমা হওয়ার সমস্যাকে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বলা হয়। যদি এটি কোনও ব্যক্তির সাথে ঘটে তবে রোগীকে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে।

আজকাল অনেকেই ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে এই সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লেও ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। লিভার শরীর থেকে সমস্ত দূষিত পদার্থ দূর করে। কিন্তু লিভারে অতিরিক্ত পরিমানে চর্বি জমে গেলে লিভার শরীর থেকে টক্সিন বের করতে পারে না, চর্বি লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হলে কিছু লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যেমন-

১/ প্রস্রাবের রং যদি অতিরিক্ত গাঢ় হলুদ হয়, তাহলে এটি ফ্যাটি লিভার সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

২/ অল্প পরিশ্রমেই যদি আপনার শ্বাসকষ্ট হয়, অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগে বা সারাদিন খুব ক্লান্ত বোধ হয়, তাহলে এটি ফ্যাটি লিভারের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

৩/ ফ্যাটি লিভারের সমস্যা অস্বাভাবিকভাবে দেখা দিলে তা শুষ্ক ত্বকের কারণ হতে পারে। এছাড়াও, ত্বকের দাগ বা গলার কাছের ত্বকের স্বাভাবিক রঙ পরিবর্তন হতে পারে।

৪/ পেট খারাপ না হলেও মাঝে মধ্যেই পেটে ব্যথা, ফ্যাটি লিভারের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।

৫/ ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় শরীরের পেশী ক্ষয় হতে থাকে। এর সঙ্গে যদি হাতের শিরা জেগে ওঠে বা বেরিয়ে আসে, চেহারায় বয়স্ক ভাব লক্ষ্য করলে লিভার অবশ্যই টেস্ট করাতে হবে।

৬/ পেটের চর্বি ক্রমাগত বাড়তে থাকলে ফ্যাটি লিভারে সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার পরিবর্তন করুন।

৭/ বেশিরভাগ যকৃতের রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল ডিহাইড্রেশন, পেট খালি খালি লাগা বা ঘন ঘন তেষ্টা পাওয়া। এই লক্ষণগুলি খেয়াল করলেই আমাদের খুব দ্রুত লিভার পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

৮/ যদি শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করার পরও প্রস্রাবের রং হলুদ এবং অতিরিক্ত গন্ধ থাকে তাহলে ফ্যাটি লিভার আছে কিনা তা পরীক্ষা করা উচিত।

৯/ যদি হঠাৎ শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং আপনার ওজন বাড়ার সাথে সাথে মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায় তবে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লিভারের জন্য উপকারী খাবার

লিভারকে সুস্থ রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় হল কোন খাবারগুলো ফ্যাটি লিভারের সমস্যা নিরাময় করতে পারে তা জানা। গবেষণায় দেখা গেছে যে চর্বির চেয়ে ফ্যাটি লিভারের জন্য বেশি দায়ী চিনি বা শর্করা। অতিরিক্ত শর্করা চর্বি হিসেবে লিভারে জমা হয়।

তাই যাদের ফ্যাটি লিভার আছে তাদের চিনিযুক্ত খাবার, যেমন- অত্যধিক চিনি, কোমল পানীয়, জুস, কোমল পানীয়, মিষ্টি ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। কিন্তু ভাত কম খান কিন্তু রুটি, ওটমিল এবং অতিরিক্ত শর্করা নেই এমন খাবার গ্রহণ করুন।

ওমেগা ৩ তৈলাক্ত মাছ, যেমন ইলিশ, রূপচাঁদা, সালমন, টুনা লিভারের চর্বি পরিশোধনে সহায়ক। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বিশেষ করে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আখরোট, বিশেষ করে এটি ফ্যাটি লিভারের জন্য খুবই উপকারী।

ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি এবং তাজা ফল খান। ফুলকপি, ব্রকলি, সবুজ শাক, অঙ্কুরসহ ফুলকপির বীজ ভালো। প্রোটিনের উৎস হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ডাল এবং ঘন করে রান্না হয়নি এমন কম চর্বিযুক্ত দুধ খেতে পারেন। দুধ বেশি ঘন করলে চর্বির মাত্রা বেড়ে যায় তাই এদিকে খেয়াল রেখে দুধ খাবেন।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, ব্ল্যাক কফি এবং গ্রিন টি লিভারের চর্বি কমায়। ইদানীং ভিটামিন ডি -এর অভাবের সঙ্গে ফ্যাটি লিভারের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তাই প্রতিদিন সকালে ত্বকে রোদ লাগানো ভালো।

লিভারের জন্য ক্ষতিকর খাবার

ফ্যাটি লিভারের সমস্যা এড়াতে মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে। কারন ফ্যাটি লিভার এবং লিভারের অন্যান্য সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ অ্যালকোহল। বিশেষ করে উচ্চ ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত চিনি খেলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে। চিনিযুক্ত খাবার অবশ্যই সীমিত বা এড়িয়ে চলতে হবে, বিশেষ করে যদি আপনার লিভারের রোগ থাকে। লিভার চিনিকে চর্বিতে রূপান্তর করে। তাই লিভারে চর্বি জমে পেট ফুলে যায়।

রেষ্টোরেন্ট বা ফাষ্টফুড জাতীয় খাবার থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে দুরে রাখুন। এগুলি হল সাধারণ তেলের মধ্যে ভাজা উচ্চ চর্বিযুক্ত এবং উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার।

লবন যতটুকু লাগবে ঠিক ততটুকুই রান্নায় ব্যবহার করুন। খাবারের সময় কাচা লবন খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করুন। কারণ অতিরিক্ত লবণ শরীরে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে, ফলে শরীরে পানি জমে যেতে পারে।

চর্বি শরীরের কোলেস্টেরল হার বাড়ায় এবং লিভারে চর্বি সঞ্চয় করে। যেমন গরুর মাংস এবং মাটন জাতীয় খাবার। ভাত, চালের গুঁড়া, সুজি ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার।

ফ্যাটি লিভার নিরাময়ের জন্য করণীয়

ফ্যাটি লিভারের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে চাইলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি। পানিতে সামান্য গোলাপী লবণ এবং লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন গরম পানি পান করা খুবই ভালো। আপনাকে প্রতিদিন ২-২.৫ লিটার পানি পান করতে হবে।

সবুজ শাকসবজি যেমন ব্রকলি, পালং শাক, কচুশাক সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা, শস্য থেকে তৈরি চিনিযুক্ত খাবার যেমন ওটস, ঘন নয় এমন কম চর্বিযুক্ত দুধ এবং দুধজাত দ্রব্য, গ্রিন টি, ব্ল্যাক কফি ইত্যাদি। প্রচুর ফল ও শাকসবজি, উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, খুব কম চিনি ও লবণ, কম চর্বিযুক্ত এবং কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট হাঁটা। যা লিভারে চর্বি জমতে বাধা দেয় আর এতে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি ব্যাপকভাবে হ্রাস করে।

ওজন ঠিক রাখা এবং ধূমপান বন্ধ করাও গুরুত্বপূর্ণ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘুম। মনে রাখবেন, যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, আমাদের লিভার কাজ করে। এর জন্য, আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে যাতে লিভারের কার্যকারিতা সঠিকভাবে চলতে পারে।

কিন্তু ব্যায়াম করতে হবে। সবসময় সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন। যারা মনে করেন যে প্রতিদিন ৪০-৫০ মিনিট ব্যায়াম আপনাকে সারাজীবনের জন্য সুস্থ রাখতে পারে তারা ভুল করেন। নির্ধারিত ব্যায়ামের পরেও আপনাকে প্রতিদিন কমপক্ষে হলেও ৭,৫০০-১,০০০০ ফুট হাঁটতে হবে। যারা অফিসের একটি সিটে কাজ করেন, তারা প্রতি ঘন্টায় একবার সিট ছেড়ে একটু হলেও শরীর নাড়াচাড়া দিয়ে আসুন। একটু হেটে আসুন বা ক্যান্টিনে যান এবং চা -কফি খান। ট্যাক্সি বা রিক্সায় না গিয়ে হেটে বাসায় আসুন – এতে রাতেও আপনার একধরনের শারীরিক ব্যায়াম হয়ে যাবে। পরিশেষে, সবাই সুস্থ থাকুন, এই কামনা করছি।

আরও পড়ুন - নিয়মিত যে ৫ টি খাবার খেলে ফ্যাটি লিভার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন

আপনার কাছে অনুরোধ
আমি আপনাদের কাছে নিয়মিত সেরামানের কন্টেন্ট শেয়ার করার চেষ্টা করছি। দয়া করে একটি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে ২০ সেকেন্ড দেখুন এবং আমাদের সাহায্য করুন।
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.