![]() |
টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত একজন ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করা হলে গুরুতর জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করা যেতে পারে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস একটি খুবই প্রচলিত সমস্যা।
প্রি-ডায়াবেটিস হলো টাইপ ২ ডায়াবেটিসের একটি পূর্বাবস্থা। প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের ডায়াবেটিস বলে মনে করেন না। সিডিসির মতে, প্রি-ডায়াবেটিসের চিকিৎসা না করলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস পাঁচ বছরের মধ্যে বিকাশ করতে পারে। প্রায়ক্ষেত্রেই এমনটা হয়ে আসছে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সূত্রপাত ধীরে ধীরে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলি হালকাভাবে প্রকাশ পায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা শুরু থেকে করা প্রয়োজন যাতে ভয়াবহ পরিণতি না হয়। এখানে সূচনালগ্নেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস শনাক্তের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো দেয়া হলো।
* ঘনঘন মূত্রত্যাগ
যদি আমরা কারো মধ্যে এই লক্ষণটি দেখাতে পাই, তবে আমরা সহজেই ধরে নিতে পারি যে তার ডায়াবেটিস আছে। আসলে, ডায়াবেটিসের সমস্যা ছাড়াও প্রস্রাব করার আরও অনেক কারণ রয়েছে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে, যখন শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা খুব বেশি থাকে, তখন কিডনি রক্ত পরিশোধনের মাধ্যমে অতিরিক্ত চিনি বের করার চেষ্টা করে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘন ঘন প্রস্রাব করে, বিশেষ করে রাতে।
* তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া
এটি ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যে আপনার যদি টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকে তবে আপনার ঘন ঘন প্রস্রাব হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত রক্তের শর্করা থেকে মুক্তি পাওয়ার এটি একটি প্রাকৃতিক উপায়। কিন্তু তা করতে গিয়ে শরীর পানিও হারায়। সময়ের সাথে সাথে, এটি পানিশূন্যতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, ডায়াবেটিস রোগীকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তৃষ্ণার্ত করে তোলে।
* প্রায়ই ক্ষুধা অনুভব করা
ডায়াবেটিস রোগীরা যা খায় তা থেকে পর্যাপ্ত শক্তি পায় না। আমাদের পরিপাকতন্ত্র খাদ্যকে ভেঙ্গে গ্লুকোজ বা সরল শর্করায় রূপান্তরিত করে। শরীর এটিকে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে, রক্তের প্রবাহ থেকে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছায় না। এই কারণেই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ক্রমাগত ক্ষুধার্ত থাকে, তারা সম্প্রতি যতই খায় না কেন।
* খুব ক্লান্ত লাগছে
টাইপ ২ ডায়াবেটিস একজন ব্যক্তির শক্তির মাত্রাকে প্রভাবিত করে যাতে সে খুব ক্লান্ত বোধ করতে পারে। প্রচুর খাবার খাওয়া সত্ত্বেও তিনি ক্লান্ত বোধ করতে পারেন। ডায়াবেটিস মূলত শরীরের রক্তপ্রবাহ থেকে কোষগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমানে শর্করা পৌছাতে পারে না বলে এই ক্লান্তিভাবের আবির্ভাব ঘটে।
* চোখে ঝাপসা দেখা
অতিরিক্ত ব্লাড সুগার চোখের ছোট রক্তনালীর ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। ডায়াবেটিস রোগীদের এক বা উভয় চোখে অস্পষ্ট দৃষ্টি থাকতে পারে এবং সমস্যাটি আসা-যাওয়া প্রকৃতির হতে পারে। যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা না নেয়, তাহলে তার রক্তনালীগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত সে অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
* ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
রক্তে শর্করার উচ্চমাত্রার কারনে শরীরের স্নায়ু এবং রক্তনালীগুলিকে ক্ষতি করতে পারে, যা রক্ত সঞ্চালনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলস্বরূপ, ক্ষত শুকতে কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি মাস লাগতে পারে, এমনকি ক্ষুদ্র ক্ষতের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। ক্ষত নিরাময়ে যত দেরি হবে, সংক্রমণের ঝুঁকি তত বেশি।
* অঙ্গের অসাড়তা
শরীরে রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা বৃদ্ধি রক্ত সঞ্চালনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে। এই কারণেই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা হাত -পায়ে ঝিনঝিনে অনুভূতি বা অসাড়তা এমনকি ব্যথা অনুভব করতে পারে। এই সমস্যাটি নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত, যা সময়ের আবর্তনের সাথে আরও খারাপ হতে পারে। যদি সঠিক চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক পরিণতি হতে পারে, এমনকি অঙ্গ কেটে ফেলার প্রয়োজনও হতে পারে।
* ত্বকে কালো দাগ
ডায়াবেটিস রোগীদের ঘাড় বা ঘাড়ের ভাঁজ, বগল এবং কুঁচকে কালো দাগ থাকতে পারে। স্পর্শ করলে এই দাগগুলি খুব নরম এবং কোমল অনুভূত হতে পারে। এই ত্বকের সমস্যাটি অ্যাক্যানথোসিস নিগ্রিকানস নামে পরিচিত। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ত্বকে অ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিকানস উপস্থিতি টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় বলা যেতে পারে।
* ছত্রাক সংক্রমণের হার বৃদ্ধি
রক্তে এবং প্রস্রাবে অতিরিক্ত শর্করা থাকলে ছত্রাক তাদের চাহিদামতো খাবার পায়। এটি ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। ছত্রাকের সংক্রমণ সাধারণত ত্বকের উষ্ণ ও আর্দ্র এলাকায় হয়, যেমন যৌনাঙ্গ, বগল এবং মুখ। আক্রান্ত স্থানে চুলকানি হতে পারে। এছাড়াও জ্বালাপোড়া বা ব্যথা এবং লালভাব হতে পারে।