![]() |
আজকাল, সংবাদপত্রের পাতায় এবং টেলিভিশনের পর্দায়, শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য অতিমাত্রায় সুন্দর সুন্দর বিজ্ঞাপন দেখা যায়। কোম্পানিগুলো দাবি করছে, তারা আকর্ষণীয় অফারসহ অতিরিক্ত ওজন কমানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। সেইসব বিজ্ঞাপনগুলো দেখে অনেকেই নিশ্চয়ই শরীরের মেদ কমানোর জন্য তাদের কাছে গিয়েছিলেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী কি না তা যথেষ্ট গবেষণার বিষয়। তবে এটা সত্য যে অনেক মানুষ অতিরিক্ত শরীরের ওজন নিয়ে বাঁচতে লড়াই করছে নিজেদের সাথেই।
শারীরিক ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?
প্রচলিতভাবে স্থূলতাকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। প্রায় সব সমাজেই এই কথা প্ৰচলিত আছে: অনেকে বলেই ফেলছেন, আপনি মোটা কারণ আপনি খুব বেশি খাবার খান। তবে, সিমেন্স হেলথকেয়ার গ্লোবালের গবেষণা অনুসারে, ফোর্বস ম্যাগাজিন বলেছে যে, মানুষেরা কেবল বেশি খেলেই মোটা হয় না। বরং শরীরের বাড়তি এই ওজনের জন্য কিছু স্বাস্থ্যগত যেকোনো কারণ দায়ী থাকতে পারে। সাধারণত, অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে উৎপাদিত শক্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হলে মানুষেরা মোটা হয়। কিন্তু অনেকেই আছেন খাবার কম খেয়েও মোটা হয়ে যাচ্ছেন।
তবে এটিও সত্য যে, অতিরিক্ত খাবারের কারণেও মানুষ মোটা হয়ে যায়। কেউ কেউ এমন খাবার পছন্দ করেন যাতে চিনি এবং ক্যালোরি বেশি থাকে, আবার কেউ কেউ ভিটামিন এবং মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার বেশি পছন্দ করেন। এ কারণে অনেকে বেশি খেয়ে সুসাস্থ্যের অধিকারী হয়ে ওঠেন, আবার অনেকে কম খেয়েও শরীরের ওজন বাড়ছে।
শরীর মোটা হওয়া বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৫০ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ স্থুলতার শিকার। অতিরিক্ত ওজন হ’ল হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিস সহ সমস্ত গুরুতর রোগের কারণ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবাইকে স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখার পরামর্শ দেন। এর জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। স্থুলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হল আপনার জীবনধারা পরিবর্তন করা।
বর্তমানে স্থূলতার আরেকটি কারণ হতে পারে বিলাসবহুল জীবনযাপন। সারাদিন খাওয়া, টেলিভিশন দেখতে বসা, শারীরিক পরিশ্রম না করা, একটানা বসে কোনো কাজ করা। রিকশা বা যান্ত্রিক গাড়ির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা অনেক সময় আপনাকে শারীরিকভাবে মোটা করে তুলতে পারে।
স্বাস্থ্যগত কারণে শরীরের ওজন বৃদ্ধি
অনেক সময় অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও অতিরিক্ত ওজনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর মধ্যে হরমোনাল হাইপোথাইরোডিজম, কুশিং সিনড্রোম ইত্যাদি রোগের কারণে মানুষের শারীরিক ওজন বাড়তে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু অতিরিক্ত বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই শরীর মোটা হয় না। লাইপোয়েডিমার মতো রোগের কারণেও এমনটা হতে পারে। অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক ব্যাথা ও জীবনযাত্রায় কষ্টের কারণে রোগীদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।
এডিনো নামক একটি বিশেষ ভাইরাসের কারণে মানুষ বেশিরভাগ মোটা হয়ে যায়। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায়, এডিনোভাইরাস এর কারণে স্থূলতার হার প্রায় ৩৩ শতাংশ।
বদহজম সমস্যা থাকলেও অতিরিক্ত শারীরিক ওজন প্রায়ই হয়। অর্থাৎ খাদ্যে ও শরীরের ভেতর পরিপাক ও প্রক্রিয়াজনিত অসুবিধা থাকার কারণে শরীরের ওজন বেড়ে যায়। একই বয়সী এবং সমান ওজনের দু'জনকে একই পরিমাণ খাবার দেওয়া সত্ত্বেও একজনের জন্য এটি স্বাভাবিক এবং অন্যজনের জন্য এটি স্থূলতার কারণ হতে পারে।
জীনগত বৈশিষ্ট্যের কারণেও অনেকেই জন্মগতভাবে শারীরিকভাবে মোটা হয়ে থাকেন। মা-বাবা শারীরিকভাবে মোটা হলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সন্তানদের মধ্যেও স্থূলতার সেই বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
খাবারের কারণে শারীরিক ওজন বৃদ্ধি
বর্তমানে অনেকেই ওজন কমানোর দৌড়ে দৌড়াচ্ছেন। কেউ ওজন মাপছে আর কেউ খাবার খাচ্ছে না। কিন্তু তারা কতটা উপকৃত হচ্ছে?
তবে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, অতিরিক্ত পরিমানে খাবার খাওয়ার কারনই শরীর মোটা হওয়ার প্রধান কারণ মনে করি। তবে, একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে আপনি কতটা খান তার সাথে স্থুলতার কোন সম্পর্ক নেই। আসলেই কি তাই?
আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় কার্যকর ওজন কমানোর জন্য একটি বিকল্প পদ্ধতি তুলে ধরেছে।
গবেষকরা বলছেন, ওজন বৃদ্ধি বা স্থুলতার আপনি কতটা খান তার সাথে সম্পর্কিত নয়। বরং এটা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের খাবার গ্রহণ করছেন তার উপর।
গবেষকরা আরও বলেন, করোনা এর সময় স্থুলতার সমস্যা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। কারণ মহামারির এ সময় খাদ্যাভ্যাসে ও জীবনধারায় পরিবর্তন এসেছে সবার মাঝেই।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রত্যেকেই বর্তমানে উচ্চ গ্লাইসেমিক এর মাত্রা, প্রক্রিয়াজাত এবং কার্বস/স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আসক্ত। এই খাবারগুলো আমাদের মেটাবলিজম কমিয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, শরীরে চর্বি জমে, এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
বোস্টন শিশু হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ড. ডেভিড লুডভিগের মতে, কম চর্বিযুক্ত খাবার দ্রুত হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেটের ব্যবহার কমিয়ে দেয়।
যা শরীরের চর্বি সংরক্ষণের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। এটি ক্ষুধা হ্রাস করে এবং দ্রুত ওজন কমাতে শুরু করে। তাই আপনি কতটা খাচ্ছেন তা পরিমাপ করার পরিবর্তে, আপনি কী খাচ্ছেন সেদিকে বেশি নজর রাখুন।