![]() |
শীতে কেন খুশকি হয় এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
- মাথায় খুশকি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে শুষ্ক ত্বকের কারণে শীতে বেশিরভাগ খুশকি সমস্যা দেখা দেয়। তৈলাক্ত ত্বক এবং ছত্রাকের সংক্রমণেও খুশকি হতে পারে।
- ঘরোয়া উপায়ে কার্যকর কিছু টিপস অনুসরণ করে শীতে এই খুশকির সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- জলপাই তেল, নারিকেল তেল, অ্যালোভেরা, নিম পাতা শীতে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ভালো কাজ করে।
খুশকির কারণে ত্বক নষ্ট হয়ে যায় আর আপনার মাথায় চুলকানিও হতে পারে। এবং এই চুলকানির কারণে আপনি প্রচুর অস্বস্তি বোধ করেন এবং বন্ধুদের সামনে লজ্জা পেতে হয়। খুশকি আমাদের সবার জন্যই অনেক বেশি বিব্রতকর সমস্যা। তবে আমরা জানি না খুশকি কী এবং কীভাবে এর থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়?
আমাদের মাথা থেকে কিছু শুকনো সাদা চামড়া বা ধূসর পদার্থ বেরিয়ে আসে যাকে আমরা খুশকি বলে থাকি। শীতকালে খুশকি বেশি হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। অনিয়মিত চুল ধোয়া, গরম জল বা হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা, পানি খুব কম পান করা ইত্যাদি। রুক্ষ ও শুষ্ক আবহাওয়া, ধুলোবালি এবং মৌসুমী চাপও এ জাতীয় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
শীতে খুশকি কীভাবে রোধ করা যায়?
- শীতকালে আমাদের সর্বদা একটি রুটিনে ফিরে আসা উচিত। এবং সেই রুটিনের একটি বড় অংশ হলো আপনার চুল নিয়মিত চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো। শীতকালে চুলে জমে থাকা ধুলোবালি এবং বিভিন্ন ধরনের ময়লা এই ধরনের সমস্যা তৈরি করে। নিয়মিত চুল আঁচড়ানো মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে এবং চুল সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর দেখায়।
- শুষ্ক ত্বকের কারণে মাথায় খুশকি হতে পারে। এজন্য আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া প্রয়োজন। প্রচুর পরিমাণে জল খেলে ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মাথায় খুশকির সমস্যা হ্রাস পায়।
- চুলে কখনও হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না। ত্বকের শুষ্কতার কারণে খুশকি সমস্যা দেখা দেয় এবং হেয়ার ড্রায়ারটি মাথার ত্বককে শুকনো এবং ঝাঁঝালো করে তোলে। এ কারণে মাথায় খুশকির সমস্যা বহুগুণে বেড়ে যায়।
- শীতে সবজি সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে। শীতে আমাদের প্রচুর পরিমানে প্রচুর শাক-সবজি খাওয়া উচিত। প্রচুর ভিটামিন খেলে ত্বকের সমস্যা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। তাই এতে মাথার খুশকির সমস্যা কমে যায়।
- চুলে অপ্রাকৃতিক বা রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। সর্বদা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি পণ্য চুলে ব্যবহার করুন। ঘরোয়া উপায়ে তৈরি এমন কিছু ব্যবহার করুন যা আপনার চুল উজ্জল এবং সুন্দর করে তুলবে।
নারিকেল তেল এবং নিম পাতার মিশ্রণ
নিম পাতার মূল গুণ হ’ল অ্যান্টি ফাঙ্গাল দমন করার ক্ষমতা। এবং নারিকেল তেল চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে সুন্দর রাখে। দশ থেকে বারোটি নিম পাতা দিয়ে ভালো করে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপরে নিম পাতার পেস্টের সাথে চার টেবিল চামচ নারিকেল তেল দিন। ভালো করে মেশানোর পরে মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগান এবং এক ঘন্টা পরে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দই ও লেবুর মিশ্রণ
এক কাপ টক দইয়ের সাথে 2 টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপরে মিশ্রণটি পুরো মাথার উপরে ম্যাসাজ করুন এবং দশ মিনিট পরে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। সাইট্রিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি যুক্ত হওয়ার কারণে মাথার ত্বকের খুশকি দূর করতে সহায়তা করবে।
জলপাই তেল এবং অ্যালোভেরা জেল
দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং কিছু অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপরে সেই মিশ্রণটি পুরো মাথায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক উপাদানগুলি ছত্রাকের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে যাতে খুশকির আক্রমণ হ্রাস পায়। এই মিশ্রণটি ত্বকের মৃত কোষগুলি অপসারণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
আদা ও পেঁয়াজের সাথে লেবু
লেবুর রস দিয়ে কিছুটা আদা এবং পেঁয়াজের বাটা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। আদা এবং পেঁয়াজের মধ্যে অ্যালিসিন নামক একটি ছত্রাকনাশক থাকে তাই এটি খুশকির সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। তাই শীতে ত্বকের সমস্যা সমাধানে আপনি এই পেস্টটি ব্যবহার করতে পারেন।
নারিকেল তেল
অল্প পরিমাণ নারিকেল তেল গরম করে পুরো মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। আরও ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই নিয়মে ব্যবহার করুন। নারিকেল তেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং স্কাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং খুশকি রোধে সহায়তা করে। লরিক এসিড খুশকি রোধ করতে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসাবে কাজ করে।
পানি পান করা
পানি ত্বক এবং কোষগুলিকে গভীরভাবে পুষ্টি যোগায় যাতে খুশকি হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি পান করা। গোসলের সময় সবসময় ঠান্ডা পানি ব্যবহার করুন কারণ ঠান্ডা পানি আদ্রতা বজায় রাখে ও রক্ত সরবরাহ বাড়ায়। অন্যদিকে গরম পানি ব্যবহারে ত্বক হয়ে পড়ে আরো বেশি আদ্র ও শুস্ক যা খুশকির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
শীতকালে খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি শুরু থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা করা খুব জরুরী। খুশকির সমস্যা যদি বেশি হয় তবে এটি সমাধান করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। এটি যখন আরও অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে তখন আপনার স্কাল্প হয়ে পড়বে চুলকানিযুক্ত এবং মাথার চুল পড়তে শুরু করবে। তাই শীত শুরুর আগে থেকেই খুশকি রোধ করতে প্রস্তুত থাকুন।
আরও পড়ুন - ভুল পদ্ধতিতে চুল পরিষ্কারের কারণেই কি পুরুষের মাথায় টাক পড়ে?