সঠিক উপায়ে হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি জেনে-নিন আজকেই।
হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি । সম্পর্কে জানতে অনেকের বেশ আগ্রহ রয়েছে। কারণ বেগুন খুবই লাভজনক একটি ফসল। একই সাথে বেগুনের বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের নানান জাতের বেগুন রয়েছে। যা বছরের বিভিন্ন সময়ে বাজারে পাওয়া যায়। বেগুন খুবই সুস্বাদু একই সাথে পুষ্টিকর একটি সবজি। বাংলাদেশে বেগুনকে মানুষ বিভিন্নভাবে রান্না করে খেয়ে থাকে। আর রমজান মাস আসলে তো অনেকের বেগুন দিয়ে তৈরি বেগুনি ছাড়া তো চলেই না। অনেকেরই পছন্দের খাবারের একটি হচ্ছে বেগুনের বেগুনি। বেগুন দিয়ে তৈরি করা যায় আরো সুস্বাদু এবং মজাদার অনেক খাবার। তবে শুধু সুস্বাদুই নয় বেগুন একই সাথে খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি। হাইব্রিড বেগুন ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের একটি ভালো উৎস। এতে ভিটামিন A, C, K, B6, ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। যা মানুষের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। বেগুনে থাকা ফাইবার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বেশ কার্যকারী।
এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যার ফলের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। একই সাথে হাইব্রিড বেগুনে থাকা ভিটামিন সি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ কার্যকারী। এবং হাইব্রিড বেগুনে থাকা ফাইবার মানুষের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকারী। এগুলো ছাড়াও রয়েছে বেগুনের আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। যার ফলে বেগুনের চাহিদা সবসময় বেশি থাকে। তাই অনেকেই হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান। হাইব্রিড বেগুন চাষ করার ক্ষেত্রে সঠিক চাষ পদ্ধতি জেনে রাখা খুবই জরুরী। অন্যথায় ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা জানতে পারবেন। হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সকল তথ্য।
হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি
আমাদের দেশি বেগুনের তুলনা হাইব্রিড বেগুন চাষে রয়েছে বেশ কিছু সুবিধা। যার ফলে অনেকেই হাইব্রিড বেগুন চাষ সম্পর্কে আগ্রহী। হাইব্রিড বেগুন চাষে আমাদের দেশি বেগুনের তুলনায় বেশি ফলন পাওয়া যায়। এছাড়াও হাইব্রিড বেগুনে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেশি বেগুনের চেয়ে ভালো। যার ফলে খুব বেশি রোগবালাই দেখা যায় না গাছ এবং বেগুনের মধ্যে। দেশি বেগুনের তুলনায় হাইব্রিড বেগুনের কালার এবং রং হয় আকর্ষণীয়। যা বাজারজাতের জন্য খুবই উপকারী। এতে করে ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়ে।
হাইব্রিড বেগুনের জাত
বাংলাদেশে বেশ অনেকগুলো হাইব্রিড বেগুনের জাত রয়েছে। তবে তাদের ভেতরে অন্যতম এবং সবথেকে জনপ্রিয় কিছু জাত হলো।
- বারি বেগুন ৪
- বারি বেগুন ৫
- বারি বেগুন ৭
- তুলসী, গ্রীন বল
- ললিতা
- হাইব্রিড বেগুন ৫১
- হাইব্রিড বেগুন ৩৩৩
বাংলাদেশে বেগুনের এই জাতগুলো উচ্চ ফলন এবং সঠিক সাইজ ও কালারের জন্য খুবই জনপ্রিয়। অন্যান্য জাতের তুলনায় এই জাতগুলোতে বেশি ফলন পাওয়া যায়। একই সাথে অন্যান্য জাতের তুলনায় এ জাতগুলোর রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক বেশি। তাই এগুলোর জনপ্রিয়তা বেশি। তবে আপনার এলাকায় কোন জাতের ফলন ভালো পাওয়া যাবে সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার জমি এবং জমির মাটির উপর। একই সাথে নির্ভর করে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর উপর। তাই জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
যারা তৈরী এবং রোপন পদ্ধতি :
হাইব্রিড বেগুন চাষে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই ভালো মানের চারা তৈরি করতে হবে। আর ভালো মানের চারা তৈরি করতে হলে অবশ্যই ভালো জাত নির্বাচন করতে হবে।
চারা তৈরি করার সময় অবশ্যই একটি শুষ্ক উঁচু আলোকিত জমিতে বীজ বপন করতে হবে। বীজতলার মাটি ঝুরঝুরে এবং জৈব সার সমৃদ্ধ হলে চারা ভালো হয়। ভালো ভাবে বীজতলা তৈরি করার পর বীজ বপন করতে হবে।
ভালো ফলাফল পেতে লাইন করে বীজ বপন করুন। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। এবং এক বীজ থেকে অন্য বীজের দূরত্ব ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার রাখুন। বীজ বপনের পর হালকা করে মাটি ছিটিয়ে দিন জমিতে এবং নিয়মিত সেচ দিন। তারপর চারা গজালে নিয়মিত পরিচর্যা করুন। এবং বেশি চারা থাকলে তা কমিয়ে পাতলা করে ফেলুন। নিয়মিত সেচ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন। আর জৈব সার প্রয়োগ করুন।
অতঃপর জমিতে চারা রোপন করতে হবে চারা গজানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর এবং চারার উচ্চতা ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার হওয়ার পর।
চারা অবশ্যই জমিতে লাইন করে গর্ত করে রোপন করতে হবে। এক গর্ত থেকে অন্য গর্তের দূরত্ব থাকবে ৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার। এবং এক লাইন থেকে অন্য লাইনের দূরত্ব থাকবে ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার। প্রতিটি গর্তে অবশ্যই একটি করে চারা রোপন করতে হবে এবং চারা রোপণ শেষে গর্তটি মাটি দিয়ে ভরে দিতে হবে। অতঃপর পানি দিতে হবে।
জমিতে সার প্রয়োগ :
ভালো ফলন পেতে অবশ্যই জমিতে সঠিক নিয়মে এবং সঠিক সময়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। হাইব্রিড বেগুন চাষের জন্য প্রতি বিঘায় ১০-১৫ টন গোবরের সার, ২-৩ টন কম্পোস্ট সার এবং ১ টন সবুজ সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। রাসায়নিক সারের পরিমাণ মাটি পরীক্ষার ফলাফলের উপর নির্ভর করে।
সাধারণত, প্রতি বিঘায় ১০০ কেজি ইউরিয়া, ৫০ কেজি টিএসপি এবং ৫০ কেজি এমপি সার প্রয়োগ করা হয় থাকে। তবে আপনার জমির পুষ্টি এবং পুষ্টির অভাবের উপর নির্ভর করে সারের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। এজন্য সার প্রয়োগের আগে জমির মাটি পরীক্ষা করতে পারেন।
সার অবশ্যই সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে জমি তৈরীর সময় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে। আর রাসায়নিক সার বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়।
বীজ বপনের আগে ভিত্তি সার হিসেবে ইউরিয়ার অর্ধেক, টিএসপি এবং এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের ২০ থেকে ২৫ দিন পর মাঝারি সার হিসেবে ইউরিয়ার অবশিষ্ট সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে। এবং ফুল আসার সময় শীর্ষ সার হিসেবে ইউরিয়া সারের অবশিষ্ট সার প্রয়োগ করতে হবে।
ফসলের পরিচর্যা :
জমিতে নিয়মিত সেচ দিন। বিশেষ করে ফুল আসার সময় এবং গাছ বৃদ্ধির সময় জমিতে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত সেচ পরিহার করুন এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখুন নিয়মিত গাছের গোড়া পরিষ্কার রাখুন। এবং আগাছা জন্মালে তা দ্রুত দমন করুন। রোগ ও পোকামাকড় থেকে গাছকে রক্ষা করুন। এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।
প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ এবং সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবং আমরা আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা হাইব্রিড বেগুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটি সঠিক এবং পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। তবে ভালো ফলাফল পেতে আপনার স্থানীয় কোন কৃষিবিদের পরামর্শ নিন। সে ক্ষেত্রে আপনার মাটি এবং আবহাওয়া বিবেচনা করে সঠিক জাত এবং ভালো ফলন পেতে পারেন।
আরও পড়ুন – সঠিক উপায়ে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি জানুন তাহলে আজকেই