ব্রয়লার মুরগি পালন সম্পর্কে সঠিক নিয়মগুলো জেনে নিন আজই
ব্রয়লার মুরগি পালন সম্পর্কে জানতে প্রতিনিয়ত মানুষ গুগলে সার্চ করে থাকেন। ব্রয়লার বা পোল্ট্রি মুরগি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয়। এদের মাংস খুবই তুলতুলে এবং নরম হয়ে থাকে। যা ছোট বড় সকলেই পছন্দ করে থাকেন। আমাদের দেশি মুরগির তুলনায় ব্রয়লার মুরগির দামও তুলনামূলক কম যার ফলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্রয়লার মুরগির রোস্ট এবং ব্রয়লার মুরগি রান্না করা হয়ে থাকে। যার ফলে খরচ অনেক কম হয়। রেস্টুরেন্টে বিভিন্ন খাবার তৈরির জন্য ব্রয়লার মুরগি নেওয়া হয়ে থাকে। বলা চলে ব্রয়লার মুরগির চাহিদাই বাংলাদেশের সব থেকে বেশি। যার ফলে প্রতিনিয়ত মানুষ বাণিজ্যিকভাবে এই জাতের মুরগি পালন করে থাকেন। তবে ব্রয়লার মুরগি খুবই সাবধানতার সাথে পালন করতে হয়। কারণ একবার রোগ আসলেই একে একে বহু মুরগি মারা যায়। তাই ব্রয়লার মুরগি পালনে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
ব্রয়লার মুরগি পালন
জনপ্রিয় এই ব্রয়লার মুরগি সারা বাংলাদেশে পাওয়া যায়। সারা বাংলাদেশে বয়লার মুরগি পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দেশি মুরগির মত ব্রয়লার মুরগি পালন করা মোটেও অত সহজ নয়। বাণিজ্যিকভাবে এই জাতের মুরগি পালন করলে খুব সাবধানতার সাথে পালন করতে হয়। আর ব্রয়লার মুরগি ঠিকভাবে পালন করা শিখে গেলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। কারণ ব্রয়লার মুরগির আমাদের দেশে প্রচুর চাহিদা। সারা বছরই প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং রেস্টুরেন্টের জন্য। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ফার্মের মুরগি পালন করে খুবই লাভবান হয়ে থাকেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে ফার্মের মুরগি পালন করে লাভবান হতে হলে এই মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। তাই আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো ব্রয়লার মুরগি পালন সম্পর্কে সকল তথ্য।
ব্রয়লার মুরগির জাত
ব্রয়লার মুরগির জাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রচুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবন করা হয়ে থাকে। খুবই গুণগত মানের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। ব্রয়লার মুরগি পালন করার জন্য সঠিক জাত নির্বাচন করা জরুরী। যা আপনার খামারের আবহাওয়া এবং জলবায়ুর জন্য উপযোগী। ব্রয়লার মুরগির উল্লেখযোগ্য কিছু জাত হলো: হাইব্রো পিএন,ষ্টার ব্রো, হাবার্ড ক্লাসিক, কব-৫০০, হাইব্রো পিজি, আরবার একর। ব্রয়লার মুরগির এই জাত গুলো বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পালন করা হয়ে থাকে। তাই আপনার পছন্দ অনুযায়ী জাত নির্বাচন করে ভালো কোন হ্যাচারি থেকে ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে।
ব্রয়লার মুরগির ঘর এবং তাপমাত্রা
ব্রয়লার মুরগির ঘর এবং ঘরের তাপমাত্রা এটি খুবই জরুরী। কারণ তাপমাত্রা বেশি কম হলে মুরগির বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ঘরে ওঠানোর আগে ঘর কে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। মুরগি আসার কম করে হলেও ৪৮ ঘন্টা আগে থেকেই মুরগির ঘর প্রস্তুত করে রাখতে হবে। ঘরে যেন পোকামাকড় আসার কোন ছিদ্র বা কোন কিছু না থাকে। বাচ্চা প্রতি জায়গা দিতে হবে ৭ সেন্টিমিটার লক্ষ্য রাখতে হবে ঘর অনুযায়ী যেন বাচ্চা বেশি না হয়ে যায়। বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালন করলে মুরগির ঘরে প্রতিদিন ২৩ ঘণ্টা আলো দিতে হবে। রাত হয়ে গেলে কৃত্রিমভাবে আলো দিতে হবে।
ব্রুডার এর সাহায্যে ঘরের তাপমাত্রা বাচ্চার জন্য ৩৫০ সেঃ বা ৯৫০ ডাঃ রাখতে হবে। এবং বাচ্চা বড় হওয়ার সাথে সাথে প্রতি সপ্তাহে ৫০ সেঃ করে তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্রয়লারের বাচ্চার জন্য। প্রথম সপ্তাহে প্রতি বর্গমিটারে ৬০ থেকে ৬৫ টি বাচ্চা ব্রুডিং করা যাবে এবং তৃতীয় সপ্তাহে প্রতি বর্গ মিটারে ৩০ থেকে ৩৫টি বাচ্চা ব্রুডিং করা যাবে।
ব্রয়লার মুরগির খাদ্য ব্যবস্থাপনা
ব্রয়লার মুরগির বয়স যখন ১ থেকে ১৪ দিন থাকবে তখন মুরগির বাচ্চাকে প্রি-স্টার্টার খাদ্য দিতে হবে। যখন বাচ্চার বয়স ১৫ থেকে ২৬ দিন হবে তখন বাচ্চাকে স্টার্টার খাদ্য দিতে হবে। বাচ্চার বয়স যখন ২৭ থেকে ৩৫ দিন বয়সী হবে তাকে দিতে হবে ফিনিশার (১) খাদ্য। অতঃপর ৩৬ দিন থেকে পরবর্তীতে বাজারজাতের আগ পর্যন্ত ফিনিশার (২) খাদ্য দিতে হবে।
বাচ্চা অবস্থায় মুরগিকে মুরগির খাবারের পাত্রে পুরোপুরি খাবার দিতে হবে। যখন মুরগির বাচ্চা বড় হয়ে যাবে তখন খাবারের পাত্রে খাবার অর্ধেক করে দিতে হবে। এতে করে খাবার কম অপচয় হবে। বড় বাচ্চাকে দিনে চারবার খাবার দিতে হবে। তবে এর বেশি দিলেও মুরগির জন্যই ভালো এতে করে দ্রুত ওজন বাড়বে। মুরগি প্রতি খাবারের জায়গা দিতে হবে ৫ সেন্টিমিটার চার সপ্তাহ পর্যন্ত। পরবর্তীতে এটিকে বাড়িয়ে ৭.৫ সেন্টিমিটার করতে হবে।
কিছু সমস্যা এবং এর প্রতিকার
ব্রয়লার মুরগি পালনে একটি রোগ হচ্ছে গামবোরো রোগ এ রোগ হলে মুরগি খুবই দুর্বল হয়ে যায়, ঠিকমতো হাঁটতে পারে না, পানি খাওয়া বন্ধ করে দেয়, পালক উস্কো খুশখো হয়ে যায়, এই রোগ ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে এর পুরোপুরি কার্যকারী কোন চিকিৎসা নেই। তবে আগে টিকা দেওয়া থাকলে এই রোগ খুব কম হয়। এই রোগ দেখা দিলে মুরগির খাদ্য এবং পানির ব্যবস্থা বাড়িয়ে দিতে হবে। ভিটামিন সি এবং স্যালাইন মেশানো পানি খাওয়াতে হবে। এভাবে এই রোগের প্রতিকার করতে হবে।
আরো একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে একই খামারের মুরগি ছোট এবং বড় হওয়া। অর্থাৎ কিছু মুরগি ছোট এবং কিছু মুরগি বড় এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। হতে পারে আপনার খামারের খাবারের পাত্র কম যার ফলে কিছু মুরগি সবসময় খাবার খেতে পারে না এবং কিছু মুরগি বেশি খেয়ে থাকে যার ফলে কিছু ছোট এবং কিছু বড় হয়। এছাড়া পরিবেশ এবং আবহাওয়ার জন্য এরকম টা হতে পারে। পুরুষ মুরগির বাচ্চার তুলনায় স্ত্রী মুরগির বাচ্চা ছোট হয়ে থাকে। তাই মুরগির বাচ্চা কেনার সময় বিভিন্ন গ্রেডের না কিনে একই গ্রেডের মুরগির বাচ্চাকে কিনুন।
চিকিৎসা ভাষায় একটি কথা আছে রোগের চিকিৎসা না করে রোগ প্রতিরোধ করা উত্তম। তবে এই কথাটা আরো বেশি কার্যকরী মুরগীর জন্য। অনেকেই রোগের প্রতিরোধ না করে শুধু ওষুধ খাইয়ে থাকেন মুরগিকে এটি মোটেও ঠিক নয়। তাই সময় মতো টিকা দিন এবং রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করুন।
প্রিয় পাঠক আশাকরি আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি ব্রয়লার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আরো এমন সব পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ঘুরে আসুন।
আরও পড়ুন – দেশি মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক নিয়মগুলো জানুন আজই