কাঁঠালের উপকারিতা কি কি এবং জানুন সুস্বাদু কাঁঠালের পরিচিতি

কাঁঠালের উপকারিতা

মালালাম ভাষার জ্যাকা শব্দ থেকে কাঁঠাল শব্দের উৎপত্তি।  তবে এর সাথে মিশে আছে পর্তুগিজ ভাষা সংস্কৃতির অংশ বিশেষ। ভাষা চক্রের ঘূর্ণিপাকে বর্তমানে কাঁঠাল এর ইংরেজি শব্দ jackfruit, দ্বিপদ নামকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম। বর্তমানে কাঁঠালের বৈজ্ঞানিক নাম Artocarpus heterophyllus । হিন্দুস্থান অর্থাৎ ভারতে কাঁঠালকে ডাকা হয় কাঠহাল। কাঁঠালের উপকারিতা অনেক আছে এটি আমরা কমবেশি সবাই জানি।

বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল, আমরা বাঙালীরা সবাই জানি। তবে বাংলাদেশের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কাতেও তাদের জাতীয় ফল কাঠাল। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতে কাঁঠাল খুব ভালো চাষ হয়। এবং কাঁঠাল সুস্বাদু হওয়ার কারণে এটি আমাদের জাতীয় ফল। শ্রীলঙ্কাতেও এমনটা হয় বলে সেখানেও এটি জাতীয় ফল।

কাঁঠাল শুধু সুস্বাদু ফল না বরং এতে রয়েছে নানান রকমের পুষ্টিগুণ। কাঁঠালের মাত্র ৩-৪ কোয়াতে যত পুষ্টি আছে সেটা দিয়ে একজন মানুষের সারাদিনের ৪ ভাগের ৩ ভাগ পুষ্টি চাহিদা মেটানো সম্ভব। কাঁঠালে আছে শর্করা, স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, খনিজ ও ভিটামিন।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ভিটামিনের পরিমাণঃ

  • ভিটামিন এ – ৫ মাইক্রোগ্রাম
  • থায়ামিন বি১ – ০.১০৫ মিগ্রা
  • রিবোফ্লাভিন বি২ – ০.০৫৫ মিগ্রা
  • নিয়াসিন বি৩ – ০.৯২ মিগ্রা
  • প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫ – ০.২৩৫ মিগ্রা
  • ভিটামিন বি৬ – ০.৩২৯ মিগ্রা
  • ফোটেল বি৯ – ২৪ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন সি – ১৩.৮ মিগ্রা
  • ভিটামিন ই – ০.৩৪ মিগ্রা

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের মধ্যে নয়টি বা তারও বেশি ভিটামিন রয়েছে এবং ভিটামিনের পরে খনিজ উপাদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি।

প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে খনিজের পরিমাণঃ

  • ক্যালসিয়াম – ২৪ মিগ্রা
  • লৌহ – ০.২৩ মিগ্রা
  • ম্যাগনেসিয়াম – ২৯ মিগ্রা
  • ম্যাঙ্গানিজ – ০.০৪৩ মিগ্রা
  • ফসফরাস – ২১ মিগ্রা
  • পটাসিয়াম – ৪৪৮ মিগ্রা
  • সোডিয়াম – ২ মিগ্রা
  • জিংক – ০.১৩ মিগ্রা

কাঁঠালের উপকারিতাঃ

কাঁঠালের উপকারিতা হলো কাঁঠাল সবজি হিসেবে খেতে পারবেন, ফল হিসেবে খেতে পারবেন এবং এটি অত্যাধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও রোগ প্রতিরোধি একটি ফল।

সকল ফলের কিছু না কিছু গুণ এখন থাকে। কাঁঠালেরও গুণ আছে, তবে কিছুটা ব্যতিক্রম।  আমরা খেয়ে থাকি এমন প্রায় ৯০% ফলের শুধুমাত্র একটি বিশেষ অংশ খাওয়ার উপযোগী হয়।  তবে কাঁঠাল ফল হিসেবে খাওয়া যায়, রান্না করেও খাওয়া যায়, এমনকি কাঁঠালের বিচিও  খাওয়া যায়।

রোগ প্রতিরোধ ও পুষ্টিগুনের দিক থেকে কাঁঠালের উপকারিতা সমূহঃ

  • কাঁঠালে চর্বি থাকে না। তাই ওজন বাড়ার আশঙ্কা নেই।
  • কাঁঠালে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি উচ্চ রক্তচাপ থেকে উপশম দেয়।
  • কাঁঠালে আছে অধিক পরিমাণে “ভিটামিন-এ”।  তাই কাঁঠাল রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে।
  • কাঁঠালে আছে “ভিটামিন-সি”, যা আপনার মাড়িকে শক্তিশালী করবে। এবং আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
  • কাঁঠালে ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস থাকায় আলসার, ক্যান্সার, বার্ধক্য রোগ প্রতিরোধে সক্ষম।
  • সর্দি-কাশি রোগের সংক্রমন থেকেও কাঁঠাল আমাদের রক্ষা করে। কারণ এতে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
  • বিষন্নতা, হতাশা ও চিন্তা কমাতেও কাঠাল বেশ কার্যকর।
  • কাঁঠাল বদহজম রোধ করে।
  • কাঁঠাল গাছের শেকড় সেদ্ধ করার পর যে পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়, তা হাঁপানীর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম।
  • একই সাথে ডায়রিয়া, জ্বর ও চর্ম রোগের সমস্যা সমাধানের জন্যও কাঁঠাল বেশ কার্যকর।
  • খনিজ উপাদানে ভরপুর কাঁঠাল ম্যাঙ্গানিজ যা রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • কাঁঠাল হাড়ের গঠন ও হাড় শক্তিশালী করতে ভূমিকা পালন করে।
  • ভিটামিন বি৬ থাকায় কাঁঠাল খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
  • ৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি কাঁঠালের রস খাওয়ালে তার ক্ষুধা নিবারণ ও প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়।
  • কাঁঠাল রক্ত সংকোচন প্রক্রিয়া সামাধানেও উপকারী।
  • প্রতিদিন ২০০ গ্রাম কাঁঠাল যদি কোন গর্ভবতী মা খায় তাহলে সে এবং তার সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক থাকবে। দুগ্ধদানকারী মা সদ্য পাকা কাঁঠাল খেলে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কাঁঠাল বেশ কার্যকর।
  • দেহের রক্ত সল্পতা দুর করে কাঁঠাল।  কারণ এতে আছে অধীক পরিমাণ এ খনিজ উপাদান।